নিজের শিল্পভাবনা নিয়ে কথা বলা বেশ কঠিন। তা ছাড়া অক্ষরের ফ্রেমে সব কথা বন্দি করা সম্ভবও হয় না। প্রাচীনকাল থেকে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে এসেও শিল্প কোনো সঠিক সংজ্ঞায় ফ্রেমবন্দি হয়নি। শিল্পের গন্তব্য অনিশ্চিত। একজন শিল্পী জানেন না তাঁকে কতটুকু পথ পাড়ি দিতে হবে। সে শুধু জানে তাঁকে পথ পাড়ি দিতে হবে। এই চলার পথই তাঁর সাফল্য-ব্যর্থতার সীমারেখা, আনন্দ-বেদনার সুর। আমার কাছে শিল্প একটি ধারণা মাত্র। আমার জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত ধারণার প্রকাশের উপলক্ষ আমার শিল্পকর্ম। জীবন অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত রুচিবোধকে পাশ কাটিয়ে যখন কেউ শিল্প সৃষ্টি করে, তখন তাকে আমার আর্টিফিশিয়াল বা কৃত্রিম মনে হয়। আমি আমার শিল্পের মাধ্যমে আমার ভাবনা ও অনুভূতির কাছাকাছি পৌঁছানোর চেষ্টা করি।
আমার শিল্পকর্মে দর্শকদের চমক দেওয়া বা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার প্রবণতা থাকে না। আমি শুধু নিজের কথা বলে যেতে চাই। সিরিজভিত্তিক কাজ করতে পছন্দ করি আমি। বিএফএর ছাত্র থাকাকালীন ‘কাকতাড়ুয়া’ শিরোনামে অনেকগুলো কাজ করি। এমএফএতে ‘সম্পর্ক’ ও ‘গন্তব্যের পূর্বে’ শিরোনামে প্রচুর কাজ করেছি। বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমার পক্ষপাত হারানো সুর আর ভাবনার প্রতি। যখন পৃথিবীতে ছিলাম না, সেই সময়কে অনুভব করার একরকম চেষ্টা থাকে আমার কাজে।
আমি ছাপচিত্র বিষয়ের ছাত্র। যদিও নিয়মে বাঁধা এচিং, ড্রাই পয়েন্ট কিংবা উডকাঠ কোনো মাধ্যমই আমাকে খুব বেশি আকৃষ্ট করে না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমি উড ইন্টাগ্লিও ও মিশ্রমাধ্যম ছাপচিত্রে প্রচুর কাজ করেছি। সাধারণত হার্ডবোর্ড, উডকাঠ, এ্যানামেল পেইন্ট, টেক্সচারহোয়াইট ইত্যাদিকে আমার ছাপচিত্রের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে পছন্দ করি। প্রাচীন গুহার দেয়াল কিংবা আমার দেশের পলিমাটি আমার কাছে পূর্বপুরুষদের স্মৃতিচিহ্ন। আমার ভাবনা ও রঙের উৎস এখানেই প্রোথিত।
Leave a Reply